সুস্থ জীবনধারণ বজায় রাখা ব্যক্তিদের অনেকেরই খাদ্যাভাসে আজকাল শোভা পাচ্ছে গ্রীন কফি। গ্রীন কফি আসে মূলত গ্রীন কফির বীজ থেকে। সাধারণ কফির ন্যায় এটি কোন রকম প্রক্রিয়াজাত করা বা ভাজা হয় না; একদম কাঁচা থাকে। গ্রীন কফি বীজের নির্যাস সুইস ওয়াটার প্রক্রিয়ায় কফিকে ডিক্যাফিনেটিং করতে ব্যবহার করা হয়। সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক এই প্রক্রিয়াটি ১৯৮০-এর দশক থেকে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এটি ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড নামের এক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রচুর মাত্রায় ধারণ করে। আর এই বৈশিষ্ট্যের কারণে অনেকেই গ্রীন কফিকে স্বাস্থ্যের জন্য উপকারি পানীয় হিসেবে গ্রহণ করে থাকেন। চলুন, জেনে নেয়া যাক গ্রীন কফির উপকারিতা সহ এবং কিভাবে গ্রীন কফি বানাতে হয়।
স্বাস্থ্য সুরক্ষায় গ্রীন কফির উপকারিতা
ব্লাড সুগার এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ
গ্রীন কফি বা এর নির্যাস পরিমিত মাত্রায় ব্যবহার রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা, ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা এবং সামগ্রিক লিপিড প্রোফাইল উন্নতি করতে পারে। এই প্রত্যেকটি বিষয় টাইপ-২ ডায়াবেটিসের বিকাশ বা অগ্রগতির সাথে যুক্ত। গ্রীন কফিতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট-সমৃদ্ধ ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড ইনসুলিন সংবেদনশীলতা উন্নত করতে পারে। এছাড়া বিপাকীয় সিনড্রোমের চিকিৎসা করতে পারে, যেটি মূলত প্রিডায়াবেটিক রোগীদের মধ্যে ডায়াবেটিসের প্রধান কারণ।
উচ্চ রক্তচাপ কমানো
উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত রোগীদের রক্তচাপ কমাতে গ্রীন কফি বীজ অথবা এর নির্যাসে থাকা ক্লোরোজেনিক অ্যাসিডের ক্ষমতা অভাবনীয়। এর পাশাপাশি রক্তনালীর কার্যকারিতাও উন্নত করার প্রমাণ বিভিন্ন গবেষণায় পাওয়া গেছে।
উচ্চ কোলেস্টেরল কমানো
কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে গ্রীন কফি বীজের নির্যাসের প্রভাব দুর্দান্ত। গ্রীন কফি নির্যাস সাপ্লিমেন্টেশন ব্যবহার করে রোগীদের মধ্যে হাই-ডেনসিটি লিপোপ্রোটিন (এইচডিএল) বা ভাল কোলেস্টেরল বৃদ্ধি এবং লো-ডেনসিটি লিপোপ্রোটিন (এলডিএল) বা খারাপ কোলেস্টেরলের হ্রাস হতে দেখা গেছে।
শরীরের ওজন কমানা
কফি পান করা একটি সাধারণ উপায় যা অনেকেই ওজন কমানোর জন্য বেছে নেয়। কফিতে থাকা ক্যাফেইন থার্মোজেনেসিসকে উদ্দীপিত করে যারা নিয়মিত শরীর চর্চা করে থাকেন তাদের শক্ত অনুশীলগুলো করতে সাহায্য করে। অনেক সময় ধরে পাকস্থলি পূর্ণতার পাশাপাশি খাওয়ার আকাঙ্ক্ষা সাময়িকভাবে হ্রাসের মাধ্যমে অতিরিক্ত ক্যালোরি গ্রহণ থেকে বিরত রাখতে সহায়তা করে। শরীরের বিপাক বৃদ্ধি জন্য দায়ী হরমোন অ্যাডিপোনেক্টিন গ্রীন কফি বীজের নির্যাস গ্রহণে বৃদ্ধি পায়।
ত্বকের উন্নতি
গ্রীন কফি বীজ নির্যাস ত্বককে হাইড্রেটেড রেখে তার গুণমান উন্নত করতে সহায়তা করে। ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড শুধুমাত্র ত্বকের আর্দ্রতা বাষ্পীভবন থেকেই রক্ষা করে না, বরং ত্বকে পর্যাপ্ত রক্ত প্রবাহে সহায়তা করে। ফলশ্রুতিতে প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুলো ত্বকে পৌছতে পারে এবং ত্বককে সুগঠিত এবং মসৃণ থাকার জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল সরবরাহ করতে পারে। গ্রীন কফি বীজের নির্যাস সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মির ক্ষতিকর প্রভাব থেকে ত্বকের নিজেকে রক্ষা করার ক্ষমতাও বাড়ায়।
তারুণ্য বজায় রাখা
ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড-এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্যগুলো শরীরকে বার্ধক্য প্রক্রিয়ার জন্য দায়ী ফ্রি-র্যাডিকেলগুলো দূর করতে সহায়তা করে। ফ্রি-র্যাডিকেলগুলো ডিএনএ ভেঙ্গে ফেলে সময়ের সাথে সাথে শরীরের তারুণ্য ভাবকে ক্রমাগত ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়।
শক্তি বর্ধক পানীয়
গ্রীন কফি বীজের নির্যাসে থাকা ক্যাফেইন একটি দারুণ দিনের সূচনা করতে শরীরের প্রয়োজনীয় শক্তিতে মাঝারি পরিমাণের জ্বালানি সরবরাহ করে। সাধারণ কফিতে ব্যবহৃত ভাজা বীজগুলোর তুলনায় কাঁচা সবুজ কফি বীজগুলোতে কম ক্যাফেইন থাকে। গ্রীন কফি বীজের বর্ধিত ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড জ্ঞানীয় ক্ষমতা বাড়ায় যার ফলে দৈনন্দিন কাজের প্রতি মনযোগ বৃদ্ধি পায় এবং সেগুলো সর্বোত্তমভাবে সম্পাদন করা যায়। অনেকেই দিনের বেলা কাজ করতে গিয়ে শক্তি হারিয়ে ফেলেন। তাদের জন্য গ্রীন কফি সঠিক বাছাই হতে পারে।
ভালো লাগার অনুভূতি বজায় রাখা
গ্রীন কফি বীজের ক্যাফিন সামগ্রী শরীরের যাবতীয় ব্যবস্থায় বৃহত্তর পরিমাণে ডোপামিন উপস্থিত থাকতে দেয়। ডোপামিন মুলত মস্তিষ্কে উৎপাদিত একটি নিউরোট্রান্সমিটার, যা শরীর ও মনে ভালো লাগার অনুভূতি সৃষ্টি করে। গ্রীন কফির নির্যাস গ্রহণে ক্যাফেইন শরীরে হরমোনের পুনঃশোষণে বাধা দেয়। এর ফলে মস্তিষ্ক সর্বাঙ্গে দীর্ঘ সময় ধরে ভালো লাগার অনুভূতি ছড়িয়ে দেয়।
Reviews
There are no reviews yet.